কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। প্রতিবছর এ ময়দানে ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ-উল-আজহার নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। কালের স্রোতে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানটি পরিণত হয়ে উঠেছে একটি ঐতিহাসিক স্থানে। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় এখানে। এ ময়দানের বিশাল জামাত গৌরবান্বিত ও ঐতিহ্যবাহী করেছে কিশোরগঞ্জকে। বর্তমানে এখানে একসঙ্গে তিন লক্ষাধিক মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করেন। নামাজ শুরুর আগে শর্টগানের ফাঁকা গুলির শব্দে সবাইকে নামাজের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সঙ্কেত দেওয়া হয়। কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্বে নরসুন্দা নদীর তীরে এর অবস্থান।
এটি শুধুমাত্র বাংলাদেশের নয় এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত। বিভিন্ন ইতিহাস ওঐতিহ্যের সাক্ষী এই শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। ১৮২৮ সাল থেকে নিয়মিত ঈদের বড় জামাতঅনুষ্ঠিত হলেও শোলাকিয়া মাঠে প্রথম ঈদেরনামাজ হয় ১৭৫০ সালে। মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর বংশধর দেওয়ান মান্নান দা খাঁ-এর ওয়াকফনামায় ১৭৫০ সাল থেকে ঈদেরজামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বলে লেখা রয়েছে। এ তথ্যানুযায়ী মাঠের বর্তমান বয়স ২৬১ বছর। জঙ্গলবাড়ির জমিদার ১৮২৮ সালথেকে নিয়মিতভাবে এখানে ঈদের নামাজ আদায় করতেন।
মাঠের ইতিহাস
ইসলামের ঐশী বাণী প্রচারের জন্য সুদূর ইয়েমেন থেকে আগত শোলাকিয়া 'সাহেব বাড়ির' পূর্বপুরুষ সুফি সৈয়দ আহমেদ তার নিজস্ব তালুকে ১৮২৮ সালে নরসুন্দা নদীর তীরে ঈদের জামাতের আয়োজন করেন। ওই জামাতে ইমামতি করেন সুফি সৈয়দ আহমেদ নিজেই। অনেকের মতে, মোনাজাতে তিনি মুসলি্লদের প্রাচুর্যতা প্রকাশে 'সোয়া লাখ' কথাটি ব্যবহার করেন। আরেক মতে, সেদিনের জামাতে ১ লাখ ২৫ হাজার (অর্থাৎ সোয়া লাখ) লোক জমায়েত হয়। ফলে সোয়া লাখ থেকে শোলাকিয়া নামটি চালু হয়ে যায়। আবার কেউ কেউ বলেন, মোগল আমলে এখানে অবস্থিত পরগনার রাজস্বের পরিমাণ ছিল সোয়া লাখ টাকা। উচ্চারণের বিবর্তনে সোয়া লাখ থেকে সোয়ালাখিয়া_ সেখান থেকে শোলাকিয়া। পরবর্তিতে ১৯৫০ সালে স্থানীয় দেওয়ান মান্নান দাদ খাঁ এই ময়দানকে অতিরিক্ত ৪.৩৫ একর জমি দান করেন।
মাঠের বর্ণনা
বর্তমান শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের আয়তন ৭ একর। নরসুন্দা নদীর তীরে শোলাকিয়ার অবস্থান। বর্তমানে শোলাকিয়ার পূর্বপ্রান্তে দু'তলা একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এই ঈদগাহ মাঠটি চারপাশে উচু দেয়ালে ঘেরা হলেও মাঝে মাঝেই ফাঁকা রাখা হয়েছে যাতে মানুষ মাঠে প্রবেশ ও বের হতে পারে। এছাড়া এই মাঠের প্রাচীর দেয়ালে কোনো দরজা নেই। শোলাকিয়া মাঠে ২৬৫ সারির প্রতিটিতে ৫০০ করে মুসল্লি দাঁড়াবার ব্যবস্থা আছে। ফলে মাঠের ভেতর সবমিলিয়ে এক লাখ বত্রিশ হাজার ৫০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে ঈদুল ফিতরের সময় দেখা যায়, আশপাশের সড়ক, খোলা জায়গা, এমনকি বাড়ির উঠানেও নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। এভাবে সর্বমোট প্রায় তিন লাখ মুসল্লি ঈদের নামাজ পড়ে থাকেন। এবং এই মুসল্লির এই সংখ্যা প্রতিবছর বেড়ে চলেছে। শোলাকিয়া ঈদগাহ'র ব্যাবস্থাপনার জন্য ৫১ সদস্যের কার্যনির্বাহী কমিটি রয়েছে। ঈদের নামাজের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতিমূলক কর্মকান্ড এই কমিটি করে থাকে।