প্রথমেই বলে রাখা ভাল, সন্তানকে বাড়িতে রেখে যাওয়ার ব্যাপারে কোনও অপরাধবোধে ভুগবেন না। এ কথা সত্যি, ক্যারিয়ারের জন্যে আপনাকে দিনের অনেকটা সময় অফিসকে দিতে হচ্ছে, কারণ সন্তান এবং ক্যারিয়ারের সমান গুরুত্ব রয়েছে আপনার জীবনে । আর ক্যারিয়ারের মানে তো এই নয় যে, আপনি সন্তানকে অবহেলা করছেন। আপনার উপার্জন করা অর্থ সন্তানকে সুন্দরভাবে বড় করে তুলতে সহায়ক। এ ছাড়া আপনার ক্যারিয়ার আপনাকে যে মানসিক সন্তুষ্টি দেয়, তা আপনাকে একজন ভাল মানুষ হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। আর একজন ভাল মানুষই তো একজন ভাল মা হতে পারেন, তাই না?
বাড়িতে মা সব সময় কাছাকাছি না থাকলে, অনেক সময়ই বাচ্চার মনে ভিত্তিহীন অভিমান বাসা বাঁধে। ও বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বোঝাতে হবে আপনার চাকরিটা পরিবার এবং ওর ভবিষ্যতের জন্যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ওর স্কুল যাওয়ার মতোই আপনার অফিস যাওয়াটাও একই রকম জরুরি, এটা ছেলেবেলা থেকেই ওর মনে গেঁথে দিন। একবার ওকে সঙ্গে করে নিজের অফিসে নিয়ে আসতে পারেন। আপনি কোথায় বসে কাজ করেন, কি কাজ করেন, কাদের সঙ্গে কাজ করেন বুঝিয়ে বললে ব্যাপারটা ওর কাছে আরও পরিষ্কার হবে।
ছেলেবেলা থেকেই বাচ্চাকে স্বনির্ভর হতে শেখান, যাতে আপনার অনুপস্থিতিতে ও অসুবিধেয় না পড়ে। নিজের জামা জুতো ঠিক জায়গায় গুছিয়ে রাখা, নিজের খাবার নিয়ে খাওয়া, হোম ওয়র্ক ঠিক সময়ে শেষ করার দায়িত্ব ওকে নিতে দিন। মনিটরিং অবশ্যই করবেন, প্রয়োজন হলে সাহায্যও করবেন কিন্তু স্নেহবশত ওর কাজটা নিজে করে দেবেন না। এইভাবেই ও তাড়াতাড়ি স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে।
বাচ্চার মানসিক সুস্থতা অনেকটাই নির্ভর করে পারিবারিক পরিবেশের উপর। যেহেতু আপনারা সব সময় ওকে সঙ্গ দিতে পারছেন না, সেই জন্যে বাবা-মা, শ্বশুরশাশুড়ি বা অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করুন যাতে কোনও ইমার্জেন্সিতে ওঁদের পাশে পেতে পারেন। মাঝে মাঝে স্কুল ফেরত আত্মীয় বা বন্ধুবান্ধবদের বাড়িতেও নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা রাখুন যাতে প্রত্যেক দিন ওকে একা কাটাতে না হয়। পাড়া প্রতিবেশীদের সঙ্গেও সদ্ভাব রাখুন যাতে আপনার অনুপস্থিতিতে ওঁরা আপনার সন্তানের খোঁজখবর নিতে পারেন। এ ছাড়াও বাচ্চার স্কুল, ক্রেশ, টিউটর, বন্ধুদের ফোন নাম্বার সব সময় নিজের কাছে রাখুন যাতে অফিসে বসেও যে কোনও মুহূর্তে আপনি ওর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
বাচ্চা স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পর অবশ্যই ফোন করে খোঁজ নিন স্কুলে কি কি হলো। পড়ার সঙ্গে সঙ্গে খেলা, এক্সট্রাকারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজ়, বন্ধু, টিচারদের খবরও অবশ্যই নেবেন। বাচ্চা যেন কখনও অনুভব না করে যে আপনি ওকে নেগলেক্ট করছেন।
বাড়িতে একা থাকাকালীন বাচ্চাকে স্ট্রিক্ট ইনস্ট্রাকশন দিন, ও যেন কাউকে দরজা না খোলে। আত্মীয়স্বজন বা নিকট বন্ধুবান্ধব সবাইকেই আগে থেকে আপনার অনুমতি নিয়ে তবেই আপনার অনুপস্থিতিতে আসতে বলুন। অতি পরিচিত হলেও বিনা অনুমতিতে ফাঁকা বাড়িতে না ঢুকতে দেওয়াই ভাল। বাড়ির দরজায় সঠিক উচ্চতায় আই হোল, ডোর চেন এবং ল্যাচের ব্যবস্থা রাখুন।
বাড়িতে একটা ল্যান্ড লাইন এবং একটা সেলফোন রাখুন যাতে একটা খারাপ হলে অন্যটা ব্যবহার করা যায়। টেলিফোন ডায়েরিতে নিজেদের নাম্বার, নিকট আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের এবং অন্যান্য ইমার্জেন্সি নাম্বার পরিষ্কার করে টুকে রাখুন। যাতে ইমার্জেন্সিতে সময় নষ্ট না হয়। বাড়িতে সি এল আই লাগানো টেলিফোন রাখুন যাতে কারা ফোন করেছিল এবং কতক্ষণ কথা হয়েছিল সেটা আপনি মনিটর করতে পারেন।