মকসুদা হালিম
জন্ম আমার শ্রাবণ মাসে, পূর্ণিমার রাত-- / ফুলের বাগান গড়ে ওঠে যেদিক বাড়াই হাত !
পন্ডিত
কাব্যসাহিত্যে ছন্দ সম্পর্কে ধারণা পেতে হলে আগে ‘মাত্রার’ ধারণা থাকা প্রয়োজন ।
মাত্রা : কাব্যে গতির সমতা রক্ষাকে "মাত্রা" বলে। মাত্রা সময় নিরূপক নির্দেশনা । কোন অক্ষরে কত সময় স্বর অবস্থান করবে , মাত্রায় তা উল্লেখ থাকে। আবৃত্তির ক্ষেত্রে মাত্রা অপরিহার্য। সময়ের পরিমাণ মাত্রা দিয়েই বোঝান হয়। সঙ্গীতে
যেমন : ধা। ধিন। ধিন। ধা। =৪ মাত্রা। তেমনি কাব্যে , ছিপ।খান। তিন।দাঁড় । তিন।জন ।মাল। লা । = ৮ মাত্রা ।
অক্ষর বলতে , আমরা একসঙ্গে কোন বর্ণে কতটা সময় অবস্থান করি----তার উপর নির্ভর করে ধরা হয় । অক্ষর অনেকটা ইংরেজী ‘সিলেবল’য়ের মত । অক্ষর আর বর্ণ সম্পূর্ণ আলাদা । যেমন ,ক+ল+ম-----এখানে বর্ণ আছে তিনটি কিন্তু যখন শব্দটা উচ্চারণ করি তখন বলি—ক+ লম ,অর্থাৎ অক্ষর এখানে দুইটি । একটি মুক্তাক্ষর এবং অন্যটি যুক্তাক্ষর না বদ্ধাক্ষর ।
সাধারণত কবিতা লেখা হয় পয়ারের ছন্দে । পয়ার ৮+৬ =১৪ মাত্রার দুইটি পর্ব বিশিষ্ট পদ বা চরণ । প্রতি দুই চরণে অন্ত্যমিল থাকে ।
কবিতায় ছন্দ তিন প্রকার । তাদের নাম,( ১) স্বরবৃত্ত , মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্ত ।
স্বরবৃত্ত ছন্দে , যুক্তাক্ষর ১ মাত্রা , এবং মুক্তাক্ষরও ১ মাত্রা। যেমন , মা। কেঁ ।দে। কয়। মন। জু। লি। মোর। + ওই। তো। ক।চি।মে।য়ে। = ১৪ মাত্রা।
(২) মাত্রাবৃত্ত ছন্দে ---মুক্তাক্ষর ১ মাত্রা আর যুক্তাক্ষর ২মাত্রা। যেমন, “একটি কথার দ্বিধা থরথর চূড়ে , ভর করেছিল সাতটি অমরাবতী !” এটা এইভাবে দেখানো হলোঃ এ।ক।টি। ক।থা।র/ দ্বি। ধা । থ।র।থ।র।চূ।ড়ে/ ভ।র। ক।রে।ছি।ল / সা।ত।টি / অ।ম।রা।ব।তি/
(৩) অক্ষরবৃত্ত ছন্দে ----মুক্তাক্ষর ১ মাত্রা , যুক্তাক্ষর—শব্দের প্রথমে ও মাঝে ১ মাত্রা কিন্তু শব্দের শেষে যুক্তাক্ষর ২ মাত্রা । যেমন , হে। বং।গ/ ভান।ডা।রে।ত।ব/ বি।বি।ধ/ র।ত।ন/ ==ভান-- যুক্তাক্ষর ,শব্দের প্রথমে বলে ১ মাত্রা। কিন্তু রতনের ‘তন’ শব্দের শেষে বলে --২মাত্রা ।
প্রায় সব কবিরাই স্বরবৃত্ত ও মাত্রাবৃত্ত ছন্দে কবিতা লেখেন। আমাদের মহাকবি মাইকেল মধুসূদন অক্ষরবৃত্ত ছন্দে লিখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন ।